প্রায় সাড়ে সাত বছর পর ব্যারিস্টার জাইমা রহমান তার দাদি বেগম খালেদা জিয়াকে একান্ত সান্নিধ্যে পাওয়ায় খুব খুশী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার নাতনি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একমাত্র কন্যা জাইমা রহমান দাদির পাশাপাশি চাচি শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই চাচাতো বোন জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে কাছে পেয়ে উপভোগ করছেন পরিপূর্ণ এক পারিবারিক জীবন।
জাইমা রহমান তার দাদি বাংলাদেশের গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সর্বশেষ পারিবারিক পরিবেশের আমেজ উপভোগ করেন ২০১৭ সালে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিসংসার শিকার হয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় জেলে যাওয়ার আগে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আপসহীন নেত্রীর খেতাবে ভূষিত বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সালের জুলাই মাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য লন্ডনে গিয়ে তার জেষ্ঠ্য পুত্র তারেক রহমানের বাসভবনে অবস্থান করেন।
তারেক রহমানকে (বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) ১/১১ পরবর্তী সময়ে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ রাতে ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে যৌথ বাহিনী গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে (রিমান্ড) নেওয়া হয়। ওই সময় প্রায় ১৮ মাস তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তারেক রহমানকে ১৩ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় ধাপে ধাপে তাকে জামিনও দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে তিনি ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার ৮ দিন পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সেই থেকে তিনি পরিবার নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন।
তিনি সেখানে থেকেই বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বেগম খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে লন্ডনে বসেই বিএনপি’কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসাজনিত কারণে জেষ্ঠ্য পুত্রের প্রবাস জীবন, অপরদিকে আওয়ামী সরকারের একগুঁয়েমী রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে ২০১৫ সালে কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর অকাল-মৃত্যুর শোক বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে কাতর ও শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তুলে। পরবর্তীতে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং একই দিনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দেশ থেকে পলায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সেদিনই নির্বাহী আদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পান।
তখন থেকেই তার বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশেষে এ বছরের (২০২৫) ৭ জানুয়ারি রাতে তিনি চিকিৎসার উদ্দেশে কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ একটি এয়ারঅ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের পথে যাত্রা করেন।
কাতারের দোহায় যাত্রাবিরতি শেষে পরের দিন ৮ জানুয়ারি তিনি ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছেন। সেখানেই সাড়ে সাত বছর পর ‘মা ও ছেলের’ মধ্যে আনন্দ-অশ্রু’র মধ্য দিয়ে ঘটে মহামিলন।
বেগম খালেদা জিয়াকে বিমান বন্দর থেকে সরাসরি মধ্য-পশ্চিম লন্ডনের ‘দ্যা লন্ডন ক্লিনিকে’ নেওয়া হয়। সেখানে লিভার বিশেষঞ্জ অধ্যাপক ডা. জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলে। যুক্তরাজ্যের আধুনিক ‘চিকিৎসা-ব্যবস্থা সম্বলিত’ অন্যতম এবং একইসাথে ঐতিহাসিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ‘দ্যা লন্ডন ক্লিনিকে’ ১৭ দিন চিকিৎসা গ্রহণ শেষে চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসপাতাল ছেড়ে বেগম খালেদা জিয়া শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসভবনে উঠেন।
দাদিকে কাছে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা জাইমা জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ‘চিকিৎসা শেষ করে দাদুকে নিয়ে আমরা এখন বাসায়। সবাই দাদুর জন্য দোয়া করবেন যেন তিনি দ্রুত সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। আপনাদের দোয়া আমাদের জন্য খুবই মূল্যবান।’