রোজায় ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করা যেন স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে খেজুর, চিনি, ছোলা ও তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা যায়। কিন্তু চলতি রোজায় পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে খেজুরের দাম কমায় ভোক্তাপর্যায়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বাজারে সব ধরনের খেজুরের কেজিতে অন্তত ৭০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তা ছাড়া চিনি, ছোলা ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের দামে অস্থিরতা দেখা যায়নি। উল্টো দাম কমেছে। তবে দুই মাস আগে শুরু হওয়া তেলের সংকট এখনো কাটেনি।
খবর নিয়ে জানা যায়, চিনি, ডাল, মটর, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, খেজুরসহ অন্তত ৯টি পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে ছোলা ও মটর ডালের আমদানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চিনি আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ টন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। উল্লিখিত সময়ে সয়াবিন তেলের আমদানি ৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ টনে। ডালজাতীয় পণ্যের আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৭ টন।
ছোলা আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ৫৫৫ টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি। খেজুরের আমদানি ২৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৪২০ টন। আলোচ্য সময়ে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ আমদানি বেড়েছে মটর ডালের। চার মাসে এই পণ্যটি আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ টন।
পেঁয়াজ আমদানি ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ টন। রসুনের আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৬১ হাজার ৩৮১ টন। আদার আমদানি ৫৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫২ হাজার ৫১৫ টন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোজায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার পণ্য আমদানিতে শুল্কছাড়সহ সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে আমদানিকারকরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য আমদানি করেছেন। এতে এবার রোজায় ভোগ্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি হবে না, বরং দামটি নিম্নগামী থাকবে।
শনিবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। একইভাবে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লার কিছু কিছু দোকানে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় ছোলা বিক্রি করতে দেখা গেছে। তা ছাড়া প্রতি কেজি খেসারির বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ ও মসুর ডাল ১১৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
শুধু চিনি ও ছোলার দাম কমেনি। বাজারে সব ধরনের খেজুরের দামে স্বস্তি ফিরেছে। কেজিতে অন্তত ৭০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতি কেজি নিম্নমানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, যা গত বছরও বিক্রি হয়েছিল ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। তা ছাড়া দাম কমে প্রতি কেজি মাবরুর-আজওয়া বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, তিউনিসিয়া ৫০০, কালমি ৮০০, দোকখানি মরিয়ম ৬০০, মেডজুল ১ জাহার ও প্রতি কেজি ডাবাশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর রমজানের আগে নিত্যপণ্যের বাজারে যে ‘আগুন ভাব’ থাকে। এবার তা নেই। উল্টো দাম কমে ভোক্তাপর্যায়ে স্বস্তি ছড়াচ্ছে।
বাজারে খেজুর, ছোলা ও চিনির দাম কমলেও এখনো স্বস্তি ফেরেনি তেলের বাজারে। বিভিন্ন দোকান ঘুরে সয়াবিন তেলের দেখা মিলছে না। সরবরাহ সংকটের সুযোগ নিয়ে অধিকাংশ বিক্রেতা খুচরায় বোতলের সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকা, দুই লিটার বোতল ৩৪৮ থেকে ৩৫০ ও ৫ লিটারের বোতল ৮৫০ থেকে ৮৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই হিসাবে সরকার নির্ধারিত দামেই আছে। তবে সরকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দর ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ১৮২ টাকা দরে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত এক মাসে খুচরাপর্যায়ে খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটারে ২০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ৫ টাকা বেড়েছে। তাতে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানি মো. জাফর হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত নভেম্বর মাস থেকেই বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। মাঝের সময়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানোর পর সরবরাহের সংকট কিছুটা কমেছিল। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে আবার তীব্র হয়েছে এ সংকট। তা ছাড়া খোলা তেলের দাম বেশি হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী কিছু বোতলজাত তেল পেলেও তা খোলা সয়াবিনের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করছেন।
তেলের মতোই রোজায় অধিক চাহিদাসম্পন্ন লেবু, শসা, বেগুনের মতো পণ্যের দামে অস্থিরতা দেখা গেছে। ৪০ টাকা দাম বেড়ে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। একইভাবে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা ও প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
বেগুন, লেবু, শসার মতো সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মাছ ও মুরগির কেজিতে অন্তত ২০ থেকে ৩০ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়ে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। তবে স্বস্তি রয়েছে ডিম ও সবজির দামেও।