প্রথম বলেই জীবন পাওয়া ব্যাটার যখন ব্যাটিং অর্ডারের ধ্বংসস্তূপ থেকে দলকে টেনে তুলতে একাই লড়াই চালিয়ে যান, যখন শারীরিক ক্লান্তি উপেক্ষা করে ডাইভ দিয়ে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন, তখনই সেই ইনিংস হয়ে ওঠে হৃদয়গ্রাহী! তাওহীদ হৃদয়ের লড়াকু সেঞ্চুরির ওপর ভর করেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতকে ২২৯ রানের লক্ষ্য দিয়েছে। অন্যদিকে, মোহাম্মদ শামি বল হাতে দেখিয়েছেন দানবীয় রূপ, একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট।
মাত্র ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস। সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে ১৫৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন হৃদয় ও জাকের আলী অনিক। ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি, একইসঙ্গে ভারতের বিপক্ষেও এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ।
যেখানে ব্যাটাররা একের পর এক ব্যর্থ, সেখানে একপ্রান্ত আগলে রেখে প্রতিরোধ গড়েন হৃদয়। ধীরস্থিরভাবে ইনিংস গড়ে তোলেন তিনি, শেষ দিকে ক্লান্তি জয় করেও চালিয়ে যান লড়াই।
৪৭.৬ ওভারে কুলদীপ যাদবের বলে ডিপ পয়েন্টে ঠেলে দেন হৃদয়। ডাইভ দিয়ে দৌড়ানোর পর তিনি এতটাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন যে মনে হচ্ছিল আর উঠে দাঁড়াতেই পারবেন না! তাসকিন আহমেদ এগিয়ে এসে তাকে তুলে ধরেন, আর ১২তম খেলোয়াড় এসে ধুলো ঝেড়ে দেন। কিন্তু এক মুহূর্তও বিশ্রাম না নিয়ে আবারও ব্যাটিং চালিয়ে যান হৃদয়!
৪৮.৪ ওভারে মোহাম্মদ শামির বলটি ডিপ পয়েন্টে ঠেলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সিঙ্গেল নেন হৃদয়, আর তাতেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান! ১১৪ বলে ১০০ রানের লড়াকু ইনিংস, যেখানে ৮টি চার ও ২টি ছক্কার মার ছিল।
তবে বেশি দূর যেতে পারেননি হৃদয়। শামির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তাতেই থামে বাংলাদেশের ইনিংস। তার আগে তাসকিনকেও ফিরিয়ে দেন শামি, যা ছিল তার ইনিংসের পঞ্চম উইকেট। এরপর ৬ উইকেট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অন্যতম সেরা বোলিং পারফরম্যান্স দেখান এই পেসার।
শেষ দিকে রিশাদ হোসেনের ছোট ঝড় কিছুটা বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশের স্কোর। ৪৪তম ওভারে অক্ষর প্যাটেলের এক ওভারেই বাংলাদেশ তোলে ২০ রান। এই ওভারে রিশাদ ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন, যা বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখে।
হৃদয়ের ১০০ ও জাকেরের ৬৮ রানের ইনিংসে ভর করে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ২২৯ রানের সম্মানজনক স্কোর গড়ে। এই উইকেটে রান তোলা সহজ নয়, তার ওপর ভারতের টপ অর্ডার যদি চাপের মুখে পড়ে, তাহলে ম্যাচ জমে উঠতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই চ্যালেঞ্জ ভারত কিভাবে সামলায়!