বিশ্বখ্যাত আধ্যাত্মিক নেতা, বিলিয়নেয়ার উদ্যোক্তা, দানবীর প্রিন্স করিম আগা খান মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তার দাতব্য সংস্থা আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মৃত্যুর খবর জানিয়েছে।
বুধবার পৃথক প্রতিবেদনে আগা খানের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে বিবিসি ও রয়টার্স।
বিশ্বের দেড় কোটি ইসমাইলি মুসলিমের ৪৯তম বংশানুক্রমিক ইমাম বা আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন আগা খান। ১৯৫৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে দাদার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি।
তার মনোনীত উত্তরসূরির নাম পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক।
সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করা আগা খান ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি ফ্রান্সের একটি প্রাসাদে বসবাস করতেন। বুধবার পর্তুগালের লিসবনে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তিনি চিরবিদায় নেন।
ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস এবং তার প্রয়াত মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আগা খান।
১৯৩৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জন্মগ্রহণ করেন প্রিন্স শাহ করিম আল হুসেইনি আগা খান। কেনিয়ার নাইরোবিতে তার শৈশব কাটে। পরে তিনি সুইজারল্যান্ডে ফিরে যান এবং লে রোজি স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর হার্ভার্ডে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়ালেখা করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
১৯৫৭ সালে তার দাদা স্যার সুলতান মোহাম্মদ শাহ আগা খান মারা গেলে তিনি ২০ বছর বয়সে শিয়া ইসমাইলি মুসলিমদের ইমাম নিযুক্ত হন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হয়েছিল। এই সম্পদ তিনি পারিবারিক উত্তরাধিকার, ঘোড়া পালন ও রেসিং, পর্যটন ও রিয়েল এস্টেটের বিনিয়োগ থেকে উপার্জন করেছিলেন।
ব্রিটিশ, ফরাসি, সুইস ও পর্তুগিজ নাগরিকত্বের অধিকারী এই ধনকুবের বিশ্বের দরিদ্র অংশের মানুষের সহায়তায় প্রচুর অর্থ দান করেছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত বন্ধুর এই মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত রাজা চার্লস। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আগা খানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
বিশ্বজুড়ে প্রায় দেড় কোটি ইসমাইলি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠি রয়েছেন, যাদের মধ্যে পাকিস্তানেই আছেন প্রায় ৫ লাখ। ভারত, আফগানিস্তান এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও এই সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রয়েছে।
আগা খানের মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে ইসমাইলি সম্প্রদায় গভীর শোকে নিমজ্জিত। তবে তার কাজ, তার দানশীলতা, এবং মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা তাকে ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় করে রাখবে।