মঙ্গলবার , ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আন্তর্জাতিক
  3. এভিয়েশন
  4. কৃষি
  5. খেলাধুলা
  6. ছবি
  7. জনপ্রিয়
  8. জাতীয়
  9. ডেঙ্গু
  10. ধর্ম
  11. নারী ও শিশু
  12. প্রবাস
  13. প্রযুক্তি
  14. ফটো গ্যালারি
  15. বানিজ্য/অর্থনীতি

১৬ বছর পর ফজলুরকে কাছে পেয়েও দুশ্চিন্তায় পরিবার

প্রতিবেদক
অনলাইন ডেস্ক
জানুয়ারি ২৮, ২০২৫ ১২:৫২ অপরাহ্ণ

Spread the love

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ১৬ বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তৎকালীন বিডিআরের ল্যান্স কর্পোরাল কুড়িগ্রামের ফজলুর রহমান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাড়িতে ফিরে স্ত্রী ও স্বজনদের কাছে পেয়ে অঝোরে কাঁদলেন তিনি। এ সময় তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমান পাড়া প্রতিবেশী ও স্বজনরা।

ফজলুর রহমান কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের ধাউরারকুঠি গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবার নাম মৃত শাহার আলী। দেশ সেবার প্রতিজ্ঞা নিয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ রাইফেলস এ। যৌবনের দিনগুলো কেটেছে দেশের সীমান্ত রক্ষায় চৌকস সিপাহি হিসেবে। সিপাহি থেকে লেন্সনায়েক পদে পদন্নতি পেয়েছিলেন তিনি। তার কর্মস্থল বিডিআর হেডকোয়ার্টার পিলখানায় থাকায় ফেঁসে যায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া বিডিয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায়। প্রহসনের বিচারে ১৬ বছর কারাভোগ করে সদ্য জামিন পান তিনি।

জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ২৪ জানুয়ারি নিজ বাড়িতে ফেরেন তিনি। এ সময় এক হৃদয় বিদারক ঘটনা সৃষ্টি হয় বাড়িতে। দলে দলে তাকে দেখতে আসে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও গ্রামবাসী।

এদিকে ১৬ বছর কারাগারে থাকাকালীন সময়ে মা-বাবা, বোনসহ ৯ জন নিকট আত্বীয়কে হারিয়েছেন তিনি। এসব আত্মীয় মারা গেলেও এক নজর দেখা কিংবা জানাজায় অংশ নেওয়ারও সুযোগ ছিল না তার। কারাগারে দেখা করার তেমন সুযোগ হয়নি পরিবারের সদস্যদেরও। কারাগারে থেকে এতগুলো স্বজন হারানোর খবরও দেয়নি কেউ। তাই বাড়িতে এসে তাদের দেখতে না পেয়ে হতাশায় পড়েছেন ফজলুর।

এখন মুক্ত হলেও ফজলুর রহমান কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিক কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছে তার। ৭ ভাই বোনের মধ্েয ফজলুর ৩য়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মুক্ত বাতাসে স্বামীকে ফিরে পেয়েও স্বামীর শারীরিক অবস্থা আর চাকরি না থাকায় সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে এ নিয়ে শঙ্কায় তার স্ত্রী। আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাশেদা।

তিনি বলেন, ১৬ বছর সমাজের নানা সমালোচনা সহ্য করে খেয়ে না খেয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেছি। নিজের সন্তান না থাকায় ননদের সন্তানকে নিয়ে মানুষ করেছি। ছোট থেকেই সেই মেয়ে তার বাবাকে (ফজলুর রহমান) খুজেছে, আমি কোনো উত্তর দিতে পারি নাই। এখন স্বামী ফিরে আসলেও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। অনেককে চিনতে পারছে, আবার অনেককে চিনতে পারছে না। আবোল তাবল বলছে। আমি এখন কী করবো, কোথায় যাব।

ফজলুর রহমানের বড় ভাই ছামাদ আলী বলেন, সংসারে অভাব অনটন থাকায় ফজলুর রহমানের পড়াশোনা বন্ধ করে বিডিআরে পাঠাই। সে খুব ভালো ছিল, ছোট দুই ভাইকে তার অনুপ্রেরণায় সেনাবাহীনিতে দেই। ফজলুর রহমান দেশের জন্য কাজ করেছে। হঠাৎ কী থেকে কী হয়ে গেল বুঝতে পারি নাই।  ১৬ বছর ভাই কারাগারে ছিল আমরা তাকে দেখতে পর্যন্ত যেতে পারি নাই। মানুষ আমাদের ঘৃর্ণার চোখে দেখেছে। এই কয়েক বছরে আমাদের বাবা-মা, এক বোনসহ ৯ জন নিকট আত্মীয় মারা গেছে  ও দেখতে পারে নাই।

ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ইউসুফ আলী জানান, বড় ভাই ফজলুর রহমানের অনুপ্রেণার আমরা দুই ভাই সেনাবাহীনিতে যোগ দেই। সেই পরিবারের সদস্য হয়েও আমার ভাইকে বিনাদোষে ১৬ বছর কারাভোগ করতে হলো। ১৯ তারিখের যে জাজমেন্ট ছিল সেটাতে আমরা খুশি। আমাদের ভাইকে ফিরে পেয়েছি। তবে ভাইয়ের চাকরি নাই। এখন অসুস্থ। কীভাবে তার সংসার চলবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা আছে। সরকারের কাছে তার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।

স্থানীয় আনিচুর রহমান ও তাসলিমা খাতুন জানান, ১৬ বছর এই পরিবারের উপর দিয়ে অনেক দুঃখ কষ্ট গেছে। এখন ফজলুর ভাই ফিরে আসলেও রোগে শোকে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা দরকার। সরকারকে তার চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন করতে হবে।

কারাভোগ করে বাড়িতে ফেরা বিডিআর সদস্য ফজলুর রহমান বলেন, এ মামলার সাথে কোনো সংশ্লিষ্ঠতা ছিল না বলে মুক্ত হয়েছি। ১৬ বছরে বাবা- মা, বোন মারা গেছেন,২ ফুফু মারা গেছেন, জ্যাঠা-মামাসহ আরও কয়েকজন নিকট আত্মীয় মারা গেছেন তাদেরও দেখতে পারি নাই। তাদের তো আর ফিরে পাব না। তাদের না দেখার কষ্ট নিয়েই থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার চাকরিটাই ছিল একমাত্র সম্বল। এখন তো চাকরিটাও নেই। সরকারের কাছে দাবি আমাদের পুনর্বাসন করুক। সরকার চাইলে এটা করতে পারে। পুনর্বাসন করা হলে আমার আর চাওয়ার কিছু নাই।

সর্বশেষ - অপরাধ

আপনার জন্য নির্বাচিত