সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টি নির্ভর করবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর। তার পরিবার ও চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক এই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে নবায়নকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) খালেদা জিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা এখনো আসেনি। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে বাসায় থেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। অবশ্য তার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান (সিঁথি) ঢাকার বাসায় আছেন। তিনি গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এসেছেন।
এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে খালেদা জিয়া নিয়মিত (রুটিন) স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শারীরিকভাবে দুর্বল অনুভব করায় তিনি যাননি। বিএনপি চেয়ারপারসন সুস্থ অনুভব করলে আজ মঙ্গলবার তিনি হাসপাতালে যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। ‘আজ (সোমবার) বিকেল ৫টার পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল খালেদা জিয়ার; কিন্তু ম্যাডাম ভালো বোধ না করায় তা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি সুস্থ বোধ করলে আজ মঙ্গলবার হাসপাতালে যাবেন।’
এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ জ্বর হওয়ায় খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বাসায় ফেরেন তিনি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দির পর খালেদা জিয়ার শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দেয়। পরে বিশেষ বিবেচনায় তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনি জটিলতা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এ ছাড়া গত ২৫ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বাসানো হয়। কয়েক দফায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন চিকিৎসকরা। তার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বারবার আবেদন-নিবেদন জানানো হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার প্রতিবারই তা উপেক্ষা করেছে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল।
এমন অবস্থায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্দেশে খালেদা জিয়া স্থায়ী মুক্তি পান। এভারকেয়ার হাসপাতালে থেকে ওই সুসংবাদ পান তিনি। তখন এক মাস ১২ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২১ আগস্ট বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তার চিকিৎসা বাসায় চলছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতেও চেষ্টা চলছে। তবে উড়োজাহাজে ভ্রমণের মতো অবস্থা না থাকায় এখনই তাকে বিদেশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
চিকিৎসকদের সূত্র জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বিদেশে নেওয়া হচ্ছে। লন্ডনেই তার পরবর্তী চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু হবে।