কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ কলেজছাত্র ইয়াছিন হাজারী (১৭) ও নাহিদ মুন্সী (১৮) অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এলাকাবাসীর সহায়তায় ও নিজেদের চেষ্টায় তাঁরা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি।
ইয়াছিন হাজারী দাউদকান্দির সুখীপুর গ্রামের আবদুল কাদের হাজারীর ছেলে। আর নাহিদ মুন্সী উপজেলার ষোলপাড়া গ্রামের মৃত মুজিবুর রহমান মুন্সীর ছেলে। গত ৪ আগস্ট দুপুরে দাউদকান্দির শহীদনগর এলাকায় আন্দোলনরত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে তাঁরা গুলিবিদ্ধ হন। ইয়াছিন স্থানীয় হাসানপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ও নাহিদ দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন।
ইয়াছিনের বাবা আবদুল কাদের হাজারী বলেন, দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন তিনি। তিন মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। করোনা মহামারি শুরুর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর অনেক চেষ্টা করেও আর বিদেশে যেতে পারেননি। দেশে প্রথমে দোকান, পরে ভুট্টার ব্যবসা ও গরু লালন–পালনের চেষ্টা করেছেন। কোথাও সফল হতে পারেননি। বর্তমানে বসতবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। বেকার জীবন যাপন করছেন। ছেলের গুলিবিদ্ধ পা এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। টাকার অভাবে এখন আর চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
অন্যদিকে নাহিদ হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁকে প্রথমে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট বিকেল পর্যন্ত তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। নিরুপায় হয়ে স্বজনেরা তাঁকে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় করে দুই মাসের বেশি সময় চিকিৎসা দেওয়া হয়। টাকার অভাবে এখন আর চিকিৎসা করাতে পারছেন না। গত মঙ্গলবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নেওয়া হয়।
নাহিদের মা নার্গিস বেগম বলেন, নাহিদের বাবা দীর্ঘ ১৬ বছর অসুস্থ থাকার পর গত বছর মারা যান। তাঁর চিকিৎসা করাতে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা ঋণ করেছেন। নাহিদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে টাকা ধার করে নাহিদের চিকিৎসা করিয়েছেন। বর্তমানে কেউ তাঁদের ঋণও দিচ্ছেন না। উল্টো ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। নাহিদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ও লেখাপড়ার ব্যয় নিয়ে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা ইসলাম বলেন, খবর নিয়ে ওই দুই শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।